আব্দুল্লাহ ফাহীম
১২.৪.২০১৩
আন্তর্জাতিক সেক্যুলার গোষ্ঠী ও তাদের দোষররা দীর্ঘদিন থেকেই অর্থ ও জনবল দিয়ে নারীদের খোদাপ্রদত্ত অধিকারসমূহ হরণ করার বিতৃষ্ণামূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তাদের ঘৃণ্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানা ধরণের লোভনীয় ও চোখধাঁধানো শিরোনাম নিয়ে অগণিত সেমিনার ও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত করেছে। এ কুৎসিত পরিকল্পনাকে বাস্তবিক রূপদান করার জন্য তারা আশ্রয় নিয়েছে জাতিসংঘের, এবং অব্যাহতভাবে কিছু দিন পর পরই নারী-অধিকার রক্ষার নাম নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সেমিনার করে হরেক রকমের ঘোষণা ও প্রস্তাবনা পেশ করছে। এজন্য জাতিসংঘে গঠন করা হয়েছে ‘কমিশন অন দ্যা স্ট্যাটাস অব উইমেন’ (Commission on the Status of Women)।
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, Appearances are deceptive (বাহ্যিক বেশভূষা হতে পারে ধোঁকা দেয়ার হাতিয়ার।) জাতিসংঘ থেকে ঘোষিত প্রতিটি প্রস্তাবনার আছে আকর্ষনীয় টাইটেল, মোহনীয় শিরোনাম। কিন্তু সামান্যমাত্র বিষয়বিত্তিক অধ্যয়ন করলে এ কথাটি ক্রীষ্টাল ক্লিয়ার হয়ে যায় যে, নারীর অধিকার রক্ষা করা তো দূরের কথা, এগুলো মহান স্রষ্টার এই পৃথিবীতে বিদ্যমান ধর্ম ও সংস্কৃতির বৈচিত্রকে সমূলে মিঠিয়ে দিতে চায়। তারা বিভিন্ন ধর্ম ও কালচারের বদলে নিয়ে আসতে চায় এক ও অভিন্ন পশ্চিমা পঁচা কালচার। আমাদের সমাজের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি জীবনব্যবস্থার উপর নির্ভর করে, প্রগতি ও আধুনিকতার নামে বিভিন্ন ধরণের প্রস্তাবনাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে তারা সদা-তৎপর। এমনকি আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারব্যবস্থাতে হস্তক্ষেপ করে স্বামী-স্ত্রী, মা-ছেলে ও বাবা-মেয়ের ব্যক্তিগত লাইফস্টাইলে সংঘাত সৃষ্টি করছে। আর এসবগুলোর পেছনে আছে এক মোহনীয় ফিলসফি – নারীর উপর থেকে সবধরণের অন্যায়-অবিচারের মূলোচ্ছেদ।
বরাবরের মত এবারও কমিশনের নিউইয়র্কস্থ প্রধান কার্যালয়ে ৪ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ ২০১৩ ঈসায়ী পর্যন্ত, Elimination and prevention of all forms of violence against women and girls ‘নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সবধরণের হিংস্রতার প্রতিরোধ ও মূলোৎপাটন’ শীর্ষক ৫৭ তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যাতে নানা রকমের মুখরোচক বিল পাশ করা হয়। এ দাবীগুলোর শীর্ষস্তান লাভ করে, যুবতী মেয়েদেরকে অবাধ যৌন-স্বাধীনতা প্রদান এবং সমকামীদের অধিকার। আর এগুলোর পিছনে লজিক হলো – জেন্ডার (লিঙ্গ)-নির্ভর হিংস্রতার (Gender-based violence) মূলোৎপাটন। কারণ, জেন্ডারের মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই সমান। সুতরাং জেন্ডারের সাম্যতা মানে, সমকামী ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের মধ্যে কোন ফারাক নেই। যেরকম স্বাভাবিক ব্যক্তির যৌন-চর্চার অধিকার আছে, তেমনিভাবে সমকামী ব্যক্তির তার নিজস্ব পদ্ধতিতে যৌন-চর্চার অধিকার থাকা উচিত। নারী ও পুরুষের সাথে আচরণে যে কোন ধরণের বৈষম্যকে (Gender-based violence) লিঙ্গ-নির্ভর হিংস্রতা বলে গন্য করা হবে। সুতরাং ব্যভিচারী ও সমকামীকে শাস্তি প্রদান করা দন্ডনীয় অপরাধ, কারণ এটা ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ!
উপরোক্ত বিলে পাশকৃত দাবীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি হলো:
১. অভিভাকত্বের (Guardianship) পরিবর্তে (Partnership) অংশীদারিত্ব পদ্ধতির বাস্তবায়ন, এবং পরিবারের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সমান দায়িত্ব আদায় করা। অর্থাৎ ঘরের খাবার-দাবার, রান্না-বান্না, খরচ-পাতি, সন্তান-সন্ততি লালন-পালন ও অন্যান্য গিরস্থালি কার্যসমূহ স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বরাবর দু’ভাগ করে আঞ্জাম দিতে হবে। (গর্ভধারণের দায়িত্বটাও ফিফটি-ফিফটি করে নিলে কি পুরোপুরিভাবে বৈষম্যের অবসান হয়ে যেতো না!)
২. বিবাহ আইনে সবধরণের বৈষম্যের মূলোৎপাটন। যেমন, বহুবিবাহ, মোহর প্রদান, পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সরবরাহ, পোষাক-পরিচ্ছদ ক্রয় করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তথা আহার, বাসস্থান ইত্যাদি কাজের একক দায়িত্ব থেকে পুরুষকে হাফ অব্যাহতি দিয়ে নারীকেও সমান দায়িত্ব প্রদান করা। মুসলমান নারীর অমুসলমানের সাথে বিবাহিত হওয়ার অনুমতি প্রদান ইত্যাদি।
৩. উত্তরাধিকার আইনে সাম্যতা বজায় রাখা।
৪. ভ্রমণ, চাকরি, গর্ভপাতের সরঞ্জামাদি ব্যবহার ইত্যাদি কাজে স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতির অনিবার্যতার অবসান ঘটানো।
৫. তালাক দেয়ার ক্ষমতাকে পুরুষের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিচারব্যবস্থার হাতে এ দায়িত্ব সমর্পন করা। (এমনিতেই ছোট ছোট মামলার সমাধান করতে কত বছর লেগে যায়, আর এটা হলে তো বিচারকরা কাজ ফাঁকি দেয়ার নতুন অজুহাত পেয়ে গেলো!)
৬. স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ইভ-টিজিংয়ের অভিযোগ তোলার অনুমতি প্রদান এবং একজন ধর্ষক ও যৌন-হয়রানীকারীকে যে শাস্তি দেয়া হয়, স্বামীকেও সমান শাস্তি প্রদান করা।
৭. মেয়েদেরকে অবাধ যৌন-চর্চার অনুমতি প্রদান, সাথে সাথে তাদেরকে নিজস্ব যৌন-সঙ্গী বাছাই করতে সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামতের উপর ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ স্বাভাবিক যৌন-সঙ্গী না সমকামীর সাথে জীবন-যাপন- এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সর্বোপরি, আটারো বৎসরের নিচে বিবাহ করাকে আইন বানিয়ে অবৈধ ঘোষণা করা। (অর্থাৎ বিবাহ-ব্যবস্থাকে বন্ধ করে ব্যভিচার ও ফ্রী-ষ্টাইল সেক্সের প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থার সহীহ বাস্তবায়ন!)
৮. কিশোরীদেরকে গর্ভপাতের সরঞ্জামাদি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বা খুবই সস্তামূল্যে সরবরাহ করা এবং তাদেরকে সেগুলি নিরাপদভাবে ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দেয়া। যৌন-অধিকার ও গর্ভধারণ-অধিকারের অজুহাত দিয়ে অপছন্দনীয় ভ্রূণের গর্ভপাত করাকে বৈধতা প্রদান করা।
৯. একজন ব্যভিচারীকে স্বামীর মর্যাদা প্রদান এবং বৈধ সন্তান ও জারজ সন্তানকে আইনের ক্ষেত্রে সমানভাবে ব্যবহার করা। অর্থাৎ যেভাবে একজন বৈধ সন্তান উত্তরাধিকারী হয়, তেমনিভাবে একজন জারজকে বৈধ উত্তরাধিকারী গন্য করে সম্পত্তি বন্টনে তার অংশ প্রদান করা।
১০. সমকামীদেরকে সবধরণের অধিকার প্রদান এবং তাদেরকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও সেফগার্ড সরবরাহ করা। পতিতাদেরকে যথাযথ সেফটি প্রদান করা।
সাথে সাথে কোন রাষ্ট্র যদি কোন ধরণের পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে ফাইনাল স্বাক্ষরদানের পূর্বে তাদের তা করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এর একটি উদাহরণ হলো, আমেরিকার মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ নতুন ধারার সংযোজন। যাতে তারা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সবধরণের হিংস্রতার নিন্দা জানায়, যার মধ্যে LGBT এবং পতিতাদের বিরুদ্ধে হিংস্রতারও নিন্দা জানানো হয়। সাথে সাথে সমকামী (Homosexuals) পরিভাষার পরিবর্তে নিয়ে আসা হয় LGBT, যার অর্থ হল- L:Lesbians (নারী সমকামী), G:Gay (পুরুষ সমকামী), B:Bisexual (দ্বি-কামী তথা যারা উভয়জাতের সাথে যৌন-চর্চা করে), T:Transgender (যারা অপারেশনের মাধ্যমে তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করে নিয়েছে) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সমানাধিকার বাস্তবায়নের জন্যই এই অদ্ভুত পরিভাষার গর্ভাধান। (না জানি হয়ত অল্প কিছু দিনের মধ্যে Sadists ’যারা নির্যাতন করে তাদের কাম মিঠায়‘, Masochists ’যারা নির্যাতিত হয়ে কাম মিঠায়’, Necrophilia ‘মৃতদেহের সাথে যৌন-চর্চা’ Paedophiles ’যারা শিশুদের সাথে যৌন-চর্চা করে’ Bestiality ’মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণীর সাথে যৌন-চর্চা‘, Rapists ’ধর্ষক‘ এবং অন্যান্য উবারধহঃ ’ Deviant ‘ জাতদেরকেও পুরোপুরী অধিকার প্রদান করার দাবী-দাওয়া উত্তাপিত করা হবে!)
বিলে প্রস্তাবিত ধারাগুলো যাতে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজস্ব দেশীয় আইনে বাস্তবায়ন করে, এর জন্য নেয়া হয় কঠোর ব্যবস্থা। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারীর মাধ্যমে প্রতিটি দেশের সরকারকে কঠের চাপের মধ্যে রাখা হয়, যা একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আন্তরীণ বিষয়াদির উপর ঘৃণ্য হস্তক্ষেপ বৈ কিছু নয়। বিষয়টি নিয়ে এতো হৈ চৈ যে, ইতোমধ্যে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমে জাতিসংঘে এই দাবী উত্তাপিত করা হয়েছে যে, জেন্ডার-নির্ভর অপরাধগুলোর বিচারের দায়িত্ব ICC -International Criminal Court ঈড়ঁৎঃ (আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট) এর হাতে সমর্পন করা হোক। আর মূল সমস্যাটাই শুরু হয় এখান থেকে। কারণ, এতোদিন পর্যন্ত সিডাওয়ের (CEDAW – Convention to Eliminate All Forms of Discrimination against Women) কোন ধারা লঙ্গন করলে কোন ধরণের আন্তর্জাতিক শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। এগুলো ছিলো কিছু প্রস্তাবনার সমষ্টি। এখন এগুলো সত্যিকারের আইনের স্ট্যাটাস পেয়ে গেছে।
একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে আমার অন্তরে একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, এ প্রস্তাবগুলোর মাধ্যমে জাতিসংঘ ও এর পশ্চিমা মোড়লরা মুসলিম বিশ্বকে কী দিতে চায়? সামান্য চক্ষু ঘুরিয়ে তারা নিজেদের সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত দেশগুলোর প্রতি কেন দৃষ্টিপাত করে না?
সাম্প্রতিককালে পশ্চিমা পরিবারব্যবস্থার চরম অবনতি ঘটছে। প্রতিনিয়তই পরিবারগুলো টুকরো টুকরো হয়ে খান খান হয়ে যাচ্ছে। সচেতন ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গরা যখন ফ্যামিলী সিস্টেম রক্ষার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সংগ্রাম করছেন, ঠিক তখনই জাতিসংঘের প্রভাবশালী ফ্রীম্যাসন কর্মীরা শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক পরিবারকে ধ্বংস করতে রাত-দিন তৎপর। WRVS এর রিপোর্ট অনুযায়ী বৃটেনে বসবাসরত ৩৬০,০০০ অধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা নিজেদেরকে একাকি মনে করেন, কারণ তাদের সন্তান-সন্ততি অত্যন্ত ব্যস্ত। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (Office for National Statistics) ২০১১ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ৭ মিলিয়নেরও অধিক পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা মাত্র একজন, যা মূল জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি একশ’ জনের মধ্যে তিরিশজন ব্যক্তি একাকি বসবাস করে। তাদের না আছে স্ত্রী, না আছে সন্তান-সন্ততি, না আছে কোন রিয়্যাল পরিবার। (একেই বলে প্রগতির চরম উৎকর্ষ!)
আজ থেকে চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে ইসলাম যে মহান বার্তা নিয়ে এসেছিল, তা হলো শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় পরিবারকে দেয়া হয়েছে উচ্চাসন। পরিবার রক্ষার জন্য ইসলামী জীবনব্যবস্থার তুলনা হতে পারে না। যেভাবে এ মহাবিশ্বের পরিচালনার দায়িত্ব এক আল্লাহর, এতে আর কারো কোন অংশীদারিত্ব নেই, এবং একটি রাষ্ট্রের দু’জন রাষ্ট্রপতি অথবা দু’জন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না, তেমনিভাবে একটি পরিবার একটি রাষ্ট্রের ন্যায়। পরিবারের ভীত্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্য একজন অভিভাবক থাকা আবশ্যকীয়। দু’জন হলেই ঝগড়া-ফাসাদের ভয়ানক দ্বার উন্মুক্ত হবে, এবং ক্রমশ তা পরিবারকে টুকরো টুকরো করে তবেই থামবে। ইসলাম প্রতিটি ব্যক্তির যোগ্যতা ও গুণাগুণের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন ধরণের দায়িত্ব প্রদান করেছে। যেমনিভাবে আইন-কানুন নিয়ে মাথা ঘামানো একজন ডাক্তারের কাজ নয়, বরং একজন ব্যারিষ্টার বা সলিসিটারের কাজ, তেমনিভাবে ইসলাম ঘর পরিচালনার মহান দায়িত্বটা পুরুষের উপর সমর্পন করেছে। এর উদ্দেশ্য নারীর অধিকার বা মর্যাদা-হরণ নয়, বরং পুরুষের আল্লাহ-প্রদত্ত যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন। সন্তান লালন-পালনে নারীদের অসাধারণ যোগ্যতার দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদেরকে দেয়া হয়েছে প্রতিটি জাতির নতুন প্রজন্মকে লালন-পালনের মহান দায়িত্ব। যেমনিভাবে প্রত্যেক পেশাজীবির রয়েছে ভীন্ন কর্মক্ষেত্র, তেমনিভাবে নারী ও পুরুষের আছে ভীন্ন কর্মস্থল। একজন ব্যারিষ্টার তো আর হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখবে না! একজন ডাক্তার তো আর আদালতে গিয়ে বিবাদীর পক্ষ হয়ে লড়বে না!
আশ্চর্য হলেও এটা সত্যি যে, পশ্চিমা বিশ্ব নারী-অধিকারের নামে নারীজাতির যে রকম অসম্মান ও অবমূল্যায়ন করেছে, ইতিহাসে এর নজীর বিরল। নারী-মুক্তির নামে নারীদেরকে ঘরের কোনা থেকে বের করা হয়েছে ঠিকই, তবে তাদের প্রতিরক্ষার জন্য দেয়া হয়নি কোন সেফগার্ড। একজন প্রেসিডেন্ট বা রাজা-বাদশারা যখন ঘর থেকে বের হয়, তাদের সাথে থাকে বডিগার্ড। পশ্চিমা বিশ্ব নারীকে ঘর থেকে বের করেছে, তবে তারা বডিগার্ড সরবরাহ করতে নারাজ। (বডিগার্ড দিলে তো আর তাদেরকে ভোগ করা যাবে না!) ইসলাম নারীকে পুরুষের অন্যায় গোলামী থেকে মুক্ত করার সাথে সাথে তাদের জন্য বডিগার্ডও সরবরাহ করেছে। পর্দা হলো রমণীর বডিগার্ড। ইসলাম ব্যতীত পৃথিবীর আর কোন ধর্ম-সংস্কৃতি নারীর বডিগার্ড সরবরাহ করে নাই। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা তক্বী উসমানীর একটি বাণী স্বরণ হয়ে গেল। তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর অদ্ভ‚ত আবিষ্কারের মধ্যে একটি হলো নারী-স্বাধীনতা। নারী যখন নিজের ঘরে বসে আপন সন্তান-সন্ততি ও স্বামীর খেয়াল রাখে, তখন তাকে বলা হয় বাকওয়ার্ড, গোঁড়া, অপ্রগতিশীল। পক্ষান্তরে যখন সেই নারীই কর্মস্থলে গিয়ে শত শত পুরুষের সেবা করে, তখন সে হয়ে যায় স্মার্ট, মডার্ন, প্রগতিশীল।
নারীকে মুক্তি ও সম্মান দিতে পশ্চিমা বিশ্ব যে ব্যর্থ হয়েছে, এর প্রমান হলো পশ্চিমে ইসলামের সুমহান বিজয়। শুধু গত বছরই (২০১২ সালে) বৃটেনে প্রায় ৫,০০০ ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ হলেন মহিলারা। আমার প্রশ্ন হলো, এসব মহিলারা তো উন্মুক্ত পশ্চিমা সমাজে লালিত-পালিত হয়েছে। চাকরী-নকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, নাইট-ক্লাব, পার্টি, মদ-ড্রাগ- সবকিছুর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও চৌদ্দশত বৎসর পুরনো লাইফ ষ্টাইল গ্রহণ করতে কে বা কারা তরবারি নিয়ে তাদেরকে বাধ্য করল! ইভান রিডলীর মত বর্ষীয়ান মহিলা সাংবাদিক আফগান তালেবানের কবজা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পরই ইসলাম গ্রহণ করে নেন। নারী-বিদ্বেষী (?) তালেবানের ব্যবহারে কোন ধরণের জাদু ছিল যে, অবশেষে তাকে মুসলমান বানিয়েই ক্ষান্ত হলো! বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শ্যালিকা লরেন ব্লুথ ফিলিস্তিন ভ্রমণ করতে যান। সেখানে একজন দরিদ্র আরব বৃদ্ধ রমণীর ব্যবহারে তিনি এতই আভিভ‚ত হন যে, এর কিছুদিন পরই শাহাদাহ পাঠ করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
চকচক করলেই সোনা হয় না। পশ্চিমা নারী-স্বাধীনতার শ্লোগান মরুভূমির মরীচিকা বৈ কিছু নয়। ইসলাম ব্যতীত পৃথিবীর আর কোন ধর্ম-সংস্কৃতি নারীকে প্রকৃত সম্মান ও মুক্তি দেয় নি আর দিতে পারবেও না। নারীমুক্তির একমাত্র পন্থাই হচ্ছে ইসলাম।