গত ২৯ শে মে ২০১৫ বার্মিংহাম মুসলিম ফাউন্ডেশন ও তাকওয়া মসজিদে মাসিক দাওয়াহ ও ফিক্বহ মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। বরাবরের মত এবারও সফলতার সাথে মজলিসটি পরিচালিত হয়। ২০১৩ সালের প্রারম্ভে বার্মিংহামের কিছু সংখ্যক বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম মুসলিম কমিউনিটির প্রতি তাদের দায়িত্বভার উপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতি মাসে স্থানীয় উলামায়ে কেরামকে নিয়ে একটি নিয়মিত প্রোগ্রাম ও মজলিসের আয়োজন করা হোক। মজলিসের প্রধান উদ্দেশ্য হবে, ধর্মীয় জীবন যাপনে মুসলিম কমিউনিটি যেসব সমস্যাসমূহের মুখোমুখি হয়, শরীয়তের আলোকে সেগুলোর সুষ্ঠু ও দলীলসমর্থিত সমাধান প্রদান করা। আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে আজবধি মজলিসটি নিয়মিতভাবে প্রতি ইংরেজি মাসের শেষ শুক্রবার তাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মজলিসের প্রধান আয়োজক ও পরিচালক শায়খ ফায়যুলহক আব্দুলআযীয সাহেবের অবিরাম পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে আজ পর্যন্ত সতেরটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মজলিসের সূচনার দিকে উল্লেখযোগ্য আলোচকদের মধ্যে ছিলেন জামিয়া ইসলামিয়া বার্মিংহামের দুই স্বনামধন্য মুহাদ্দিস মাওলানা নূরুল ইসলাম সাহেব ও মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেব। পরবর্তীতে আলোচনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শরীয়া কাউন্সিল মিডল্যান্ডসের চেয়ারম্যান মাওলানা ফখরুদ্দীন সাহেব ও ভাইস চেয়ারম্যান মুফতী সাঈদ আহমদ সাহেব। নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও শায়খ ফায়যুলহক সাহেবের ধারাবাহিক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা থেকেও নিয়মিত শ্রোতারা উপকৃত হতে থাকেন। যেহেতু আলোচকদের সবাই বিজ্ঞ আলেম এবং গভীর জ্ঞানের অধিকারী, তাই প্রতিটি অধিবেশনই ছিল উপভোগ্য এবং অত্যন্ত উপকারী। মজলিসের একজন নিয়মিত উপস্থিতি জানান, মজলিসে আসার পূর্বে ইসলাম সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে তার তেমন ধারণা ছিল না। মজলিসে আসার পর থেকে তিনি অনেক উপকৃত হন এবং তার জ্ঞানের পরিসর অনেকটা বৃদ্ধি পায়।
বৃটেনে বিভিন্ন দেশ ও বর্ণের মুসলমানরা বসবাস করেন। প্রত্যেক দেশের মুসলমানদের রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট। সবই মুসলমান। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈচিত্রতা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষকরে, উপমহাদেশের মুসলমানগণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ পার্থক্যটার উদ্ভব হয় অনেক সময় কালচারের কারণে আর অনেক সময় ইসলাম ধর্মের ভীন্ন ব্যাখ্যার কারণে। অজ্ঞতার দরূন বৈচিত্রতা অনেক সময় মতানৈক্য ও পরস্পর সংঘাতের কারণ হয়ে দাড়ায়। এ জন্য উলামা কেরামের দায়িত্ব হয়ে দাড়ায় জনসাধারণের সামনে পার্থক্যগুলোকে শরীয়তের আলোকে স্পষ্ট করে দেয়া, এবং এগুলোর উপযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করে সন্দেহ নিরসন করা। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যতা সংরক্ষণের মহান দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের কাঁধেই আসে।
এ বিষয়টিকে সামনে রেখেই বিভিন্ন যুগোপুযগি বিষয়সমূহের উপর আলোচকরা আলোচনা পেশ করেন। আলোচনার পূর্বে তারা তাদের ওপর অর্পিত বিষয়টির উপর প্রচুর অধ্যয়ন করে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত করেন। তারপর গবেষণাপত্রের আলোকে তাদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য পেশ করেন। এ পর্যন্ত যেসব বিষয়গুলির উপর আলোচনা উপস্থাপন করা হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কোরআন সুন্নাহর আলোকে পরিপূর্ণ নামাজ, তারাবীহর নামাজ কত রাকআত, ঈদের নামাজে কত তাকবীর, নারী-পুরুষের নামাজের পার্থক্যসমূহ, তালাকের বিভিন্ন মাসায়েল ইত্যাদি।
গত ২৯ শে মের অধিবেশনে আলোচনা পেশ করেন শায়খ ফায়যুলহক সাহেব। তিনি শবে বরাতের করণীয় ও বর্জনীয় আমলসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনাটি ছিল দলীলসমর্থিত এবং অত্যন্ত উপভোগ্য। আমাদের সমাজে শবে বরাত নিয়ে বিভিন্ন বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি আছে। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে শায়খ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী আলোচনা উপস্থাপন করেন। মনোরম উপস্থাপনাভঙ্গি শ্রোতাদেরকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করছিল। এত কোন সন্দেহ নেই যে, উপস্থিত সবাই এ আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং অনেক সন্দেহ দূরীভূত হয়েছে।
আরেকটি আলোচনা পেশ করা হয় তালাক সম্পর্কে। আমাদের সমাজে তালাক নিয়ে অনেক সীমাতিক্রম করা হয়। অজ্ঞতার দরূন কিছু স্বামীরা তাদের স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিয়ে দেন। তালাক দেয়ার পর মাথায় আসে, এ আমি কি করলাম! এ বিষয়টি নিয়ে দলীলসাপেক্ষ আলোচনা পেশ করা হয় যে, একসাথে তিন তালাক দিয়ে দিলে স্ত্রী তার স্বামী থেকে পরিপূর্ণভাবে পৃথক হয়ে যায়। স্বামীর জন্য এ স্ত্রীর সাথে একসাথে ঘরবাস করা হারাম হয়ে যায়।
মজলিসের অধিকাংশ উপস্থিতি ও শ্রোতারা যদিও আলেম-ওলামা, জনসাধারণ যে এ-র মাধ্যমে উপকৃত হন না তা নয়। আলেম-উলামার সাথে সাথে জ্ঞান-পিপাসু পেশাজীবিরাও নিয়মিত মজলিসে আগমন করেন। মজলিসকে সফল করার জন্য শায়খ ফায়যুলহক অবিরাম পরিশ্রম করছেন। মহান আল্লাহ যেন তাঁর শ্রমগুলোকে কবুল করেন এবং আমাদের সবাইকে এ-র মাধ্যমে উপকৃত করেন।
আব্দুল্লাহ ফাহীম
স্কুল অব ল’, ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম
৩০.৫.২০১৫