আব্দুল্লাহ নাবীল
১১.৭.২০১৩
আল্লাহ পাকের বিরাট অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে দ্বীনের বুঝ দান করেছেন, এবং যাকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করে নেন; শুধুমাত্র তাকেই সে বুঝ দান করেন। আমাদের অন্তর থেকে ঐ সকল তাবলীগী ভাইদের জন্য সর্বদা দোয়া বের হয় যারা আমাদের পিছনে ঘুরে ঘুরে, অনুনয় করে করে এ কথাটি উপলব্ধি করিয়েছেন যে- দুনিয়াই সবকিছু নয়। এখানের আনন্দ-আহ্লাদ ও সুখ-শান্তিই মৌলিক উদ্দ্যেশ্য নয়; বরং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর দ্বীন উপহার দিয়েছেন, যা স্বয়ং নিজেই একটি মহান অনুগ্রহ এবং বিশাল নিয়ামত।
আমাদের জীবনের উদ্দ্যেশ্য তো ছিল- ক্রিকেট, খ্যাতি, সম্পদ, বিলাসবহুল গাড়ী ও বড় বড় বাড়ী। এগুলোকেই আমরা উদ্দেশ্য মনে করেছিলাম, এবং এগুলো অর্জনের জন্য সকাল-সন্ধ্যা, দিন-রাত এতোই মশগুল ছিলাম যে দ্বীনের কোন হুঁশই ছিলনা। আমাদের ত্রুটি ছিল যে, আমরা ওগুলোকেই সবকিছু মনে করে নিয়েছিলাম, এবং আমাদের বিশ্বাস ছিল যে, যদি আমরা ওগুলো অর্জন করতে পারি তাহলে আমরা সুখ-শান্তি পেয়ে যাব। কিন্তু বন্ধুরা! বিশ্বাস করো! ওগুলোতে আমরা শান্তি পাই নাই। যদি ওগুলোতে আমরা শান্তি পেতাম, তাহলে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে যেতাম, এবং আল্লাহর রাস্তায় কখনো বের হতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করো! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য ও অনিবার্য। শান্তি তো একমাত্র প্রভূর স্বরণের মাঝে। তাঁর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাঝে।
বন্ধুগণ! আমি ২৩ বছর যাবত এ সাধনা করেছি যে, যখন বল আসে তখন কীভাবে ওটাকে ব্যাট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করব; এবং আল্লাহর মেহেরবানীতে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী স্কোর আমার। কিন্তু একটু ভেবে চিন্তে বলুন- আল্লাহ না চাহে যদি কোন ধরণের প্রস্তুতিবিহীন এখান থেকে চলে যাই (ইহকাল ত্যাগ করি) তাহলে কী এই ক্যাপ্টেনশীপ, ২৩ সালের সাধনা এবং সবচেয়ে বেশী স্কোর আমাকে কবর ও হাশরে মুক্তিদান করবে? কবরে আমাকে তো এ প্রশ্ন করা হবে না যে, কতটুকু স্কোর অর্জন করেছি। ওখানে তো কর্মের খবরাবর হবে। বন্ধুগণ! বিশ্বাস করো! তোমরা হয়তো ঐ জিনিসগুলোর জন্য আমার উপর খুবই ঈর্ষা করেছ। কিন্তু যে জিনিসগুলো আমাকে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর নিকটে নিয়ে যাবে, আমার তো বিশ্বাস যে তা হল- দ্বীনের উপর চলা এবং দ্বীনের বিস্তারকাজে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য।
আল্লাহর শুকর যে, আজ আমাদের পুরো টীম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে। এমনকি ফজরের সময়ও সকল খেলোয়াড়রা জেগে উঠে। এগুলো হল- ঐ সমস্ত তাবলীগী ভাইদের মেহনত ও দোয়ার ফসল। প্রথম প্রথম আমরা ঐ তাবলীগী জামাতগুলোর উপর আশ্চর্যান্বিত হতাম যে, এই তাবলীগীরা নিজেদের ঘর-বাড়ী, স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে বিছানা নিয়ে বের হয়ে পড়ে! এখন বুঝে আসে যে, তাদের বের হবার কারণেই আল্লাহ তায়ালা বিশ্বব্যাপী হেদায়াতের হাওয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন এই মেহনত আমাদের টীমে পৌঁছল তখন ইউসুফ ইউহান্না চমকে উঠল মুহাম্মদ ইউসুফ হিশেবে।
আমরা তিন দিনের জন্য পেশাওয়ারে পৌঁছলাম। সেখানে মুহাম্মদ ইউসুফের বয়ান হল। মাশাআল্লাহ প্রচুর লোক জমায়েত হলেন। সেখানে সে বলল, ‘‘আপনারা তো বংশগতভাবে মুসলমান। আপনাদের মুসলমান হওয়ার গুরুত্বানুভ‚তি নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞেস করুন, যার মাতা-পিতাও এখনো মুসলমান হননি। যেমন, আপনাদের কারো সম্পর্কে এ ঘোষণা করা হয় যে, অমুক ব্যক্তি আগামীকাল ওয়ান ডে অথবা টেষ্ট ম্যাচ খেলবে, আপনাদের আনন্দের কি কোন অন্ত থাকবে? অথচ এটা আমাদের জন্য দৈনন্দিন ও সাধারণ বিষয়। ঠিক সে-ই অবস্থা আমার। প্রিয় বন্ধুরা! যদি সমস্ত মুসলমানরা পুরোপুরিভাবে দ্বীনানুযায়ী জীবন যাপন করত, তাহলে সমগ্র বিশ্ব মুসলমান হয়ে যেত। আমি আপনাদেরকে সত্য কথা বলছি। আমি যদি পূর্বে সঠিক মুসলমান পেতাম, তাহলে অনেক আগেই মুসলমান হয়ে যেতাম। সুতরাং আসুন! আল্লাহর ওয়াস্তে আমরা আমাদের আমলী জিন্দেগী সম্পূর্ণভাবে দ্বীনের মুতাবিক বানিয়ে ফেলি।’’
এমতাবস্থায় সাবেক অভিনেতা এবং বর্তমান দা’য়ী ইলাল্লাহ মুহাম্মদ নায়ীম বাট মুহাম্মদ ইউসুফের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আরো বললেন, ‘‘যখন থেকে সে মুসলমান হয়েছে তার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে। তার স্ত্রী মুসলমান হয়নি; তাই তার জন্য প্রচুর দোয়া করাত। মুহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী তার থেকে যে পাক্কা খৃষ্টান ছিল, শুধু তাই নয়; বরং সে একজন সক্রীয় মিশনারী ছিল। যখনই ইউসুফ তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিত সে বলত, ‘‘ইউসুফ! আমি যদি মুসলমান হই, তাহলে তোমার মত চুপে চুপে মুসলমান হব না; বরং ডংকা বাজিয়ে মুসলমান হব।’’ অতপর যখন সে ইউসুফের ইসলাম-পরবর্তী জীবন দেখল- আগে তো সে সকাল এগারটার পূর্বে ঘুম থেকে উঠার নামই নিত না। আজ এক বৎসর যাবত তার তাহাজ্জুদও মিস হয়নি। যেহেতু সে একজন সুপারষ্টার; তাই পুরুষদের সাথে সাথে বেপর্দা মহিলারাও তার ভক্ত ছিল, যারা তার অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য আসত। প্রথমে তো সে তাদের সাথে মিশে যেত, আর এখন এক পলকের জন্যও উপরের দিকে তাকায় না। প্রথমে অসচ্চরিত্র ছিল- মুখে যা আসে বলে ফেলত, এখন তার উপর সীমাতিক্রম করার পরও নিশ্চুপ থাকে। তখন আল্লাহ তায়ালা তার স্ত্রীর অন্তরেও হেদায়াতের মশাল জালিয়ে দিলেন।
টীম হেজাযে মুকাদ্দাস ম্যাচ খেলতে গেল। সেখানে আমরা দু’টি ম্যাচ খেলি। যেদিন প্রথম ম্যাচ ছিল, সেদিন মাগরিব পর্যন্ত ৩৫ ওভার শেষ হয়ে গেল। মাগরিবের নামাজের জন্য স্টেডিয়ামেই জায়নামায বিছানো হল। ইনজামামুল হক বলল, আজ মুহাম্মদ ইউসুফ নামাযের ইমামতি করবে। মুহাম্মদ ইউসুফ ইমামতি করল, তখন তার পিছনে নামাজ আদায়কারীদের মধ্যে অনেক আরবও ছিলেন। আশ্চর্য এক দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছিল। আমাদের আঁখিগুলো অশ্রæসিক্ত হয়ে গেল। যখন আল্লাহ কারো উপর দয়াবান হন, তখন একজন নওমুসলিমকেও সম্মানের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছিয়ে দেন। সে কী ছিল! আর আজ সে আরব ও অনারবের ইমাম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
উঠ ক্যাহ বযমে জাহাঁ কা আব আওর হী আন্দাজ হ্যায়
মাশরিক ও মাগরিব ম্যাঁ তেরে দাওর কা আগায হ্যায়
জাগো! এখন পৃথিবীর মাহফিলের অবস্থা অন্যরকম
পূর্ব ও পশ্চিমে তোমার রাজত্বের সূচনা হয়ে গেছে।
(পাকিস্তানের বিখ্যাত মাসিক ‘আদ দা’ওয়াহ ইলাল্লাহ’ অনুকরণে লিখেছেন-
আব্দুল্লাহ নাবীল, জামিয়া ইসলামিয়া বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড)