নারীবাদীদের আস্ফালন

নারীবাদীদের আস্ফালন

আব্দুল্লাহ ফাহীম

৬/৫/২০১৩

গত ২৫ শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত বক্তারা বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী মেনে নেয়া যায় না। একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়, যাতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, জাতিসংঘের নারীর প্রতি সবধরণের বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং আরো কিছু দাবী উত্তাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে সাভারে ভবনধসে নিহত লোকজনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। [সূত্র: পরিবর্তন]

অনেকেই হয়তো ভাবছেন, মদীনা সনদের নাম শুনলাম। শিক্ষা সনদও চিনি। এখন আবার একটি নতুন সনদ। সিডও সনদ। এটা কোত্থেকে আসল? অন্যদিকে গত কয়েকদিন পূর্বে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মদীনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন। সমগ্র দেশ যখন মদীনা সনদের গোলকধাঁধায় ভ্যাবাচ্যাকা, বামপন্থী ও ডানপন্থীদের মধ্যে যখন মদীনা সনদের ভাবার্থ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক; ঠিক তখনই সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নারীবাদীরা আলটিমেটাম দিল, সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু আমাদের ক’জনই বা সিডও সনদের সম্পর্কে অবগত আছি! নারীবাদীরা বলে, তারা নারীজাতির সামগ্রিক কল্যাণের জন্য কাজ করে। সিডও সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশী নারীদের ইহকালীন ও পরকালীন কামিয়াবীর সার্টিফিকেট প্রদান করতে চায়। কিন্তু নারীবাদীদের এ দাবী যে নিছক মিথ্যা ও প্রতারণা বৈ কিছু নয়, সেটা সিডও সনদের সামান্য বিষয়বিত্তিক অধ্যয়নই ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার করে দেয়।

সিডও ইংরেজীতে হল – CEDAW যার পূর্ণরূপ হল-  Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, অর্থাৎ নারীর প্রতি সবধরণের বৈষম্য বিলোপ সনদ। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের জেনারেল এসেম্বলী এ সনদটির খছরা প্রণয়ন করে, এবং ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে এটাকে ‘নারী-অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ’ শিরোনাম দিয়ে কার্যকর করা হয়। এবং সাথে সাথে এটাকে জাতিসংঘের রেজোলুশন নং ৩৪/১৮০ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মজার বিষয় হল যে, আন্তর্জাতিক নারীবাদীদের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রসহ  জাতিসংঘের আরও আটটি সদস্য দেশ এ সনদে স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জানায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ইরান, ভ্যাটিকান, সোমালিয়া, সুদান এবং টুঙ্গা। সর্বপ্রথম যে রাষ্ট্রটি স্বাক্ষরদান করে তা হল – সুইডেন, এবং তা ঘটে ১৯৮০ সালের ২রা জুলাই। ১৯৮১ সালের ৩ রা সেপ্টেম্বর আরও কুড়িটি রাষ্ট্রের স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ সনদটি আন্তর্জাতিক সনদের মর্যাদা লাভ করে নেয়। ২০০৯ সালের মে মাস অবধি বিশ্বের ১৮৬ টি রাষ্ট্র এ সনদকে অনুমোদন প্রদান করে এবং অনেকে স্বাক্ষরও প্রদান করে।  আবার  কিছু কিছু মুসলিম রাষ্ট্র সিডওের গু’টি কয়েক ধারায় আপত্তি আনে এবং ঐ ধারাগুলো ব্যতীত অন্যান্য ধারাগুলোতে স্বাক্ষর করে নেয়।

সিডও সনদে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পেশ করা হয় তা হল – ডমেস্টিক আইন তৈরীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সবধরণের বৈষম্যতার বিলোপসাধন। অবাধ যৌনতা ও সমকামীতাকে সংসদে আইন পাশ করে বৈধতা প্রদান করা। সনদের ১০ নং ধারায় সহশিক্ষার উৎসাহ প্রদান ও মেয়েদেরকে গর্ভপাত ও পরিবার পরিকল্পনার নিয়মাবলী সম্পর্কে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রতি জোর দেয়া হয়। ১১ নং ধারা নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে সবধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং চাকরী-নকরী করার ক্ষেত্রে সবধরণের বাধা-প্রতিবন্ধকতা বিলোপ করার উপর গুরুত্বারোপ করে।

নারী-পুরুষের মধ্যে সাম্যতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিডওয়ের পাশাপাশি জাতিসংঘ আরও কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ‘কমিশন অন দ্যা স্ট্যাটাস অব উইমেন’ (Commission on the Status of Women)) – হল অন্যতম। গত ৪ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ ২০১৩ ঈসায়ী পর্যন্ত, এ কমিশন Elimination and prevention of all forms of violence against women and girls ‘নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সবধরণের হিংস্রতার প্রতিরোধ ও মূলোৎপাটন’ শীর্ষক একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত করে। এতেও সিডও সনদ বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়া হয়। পাশাপাশি আরও কিছু  বিল পাশ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল:

১. তালাক দেয়ার ক্ষমতাকে পুরুষের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিচারব্যবস্থার হাতে সমর্পন করা।

২. স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ইভ-টিজিংয়ের অভিযোগ তোলার অধিকার দেয়া এবং এর জন্য যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা।

৩. অবাধ যৌনতার উৎসাহ প্রদান। আটারো বৎসরের নিচে বিবাহ করাকে আইন বানিয়ে অবৈধ ঘোষণা করা।

৪. কিশোরীদেরকে গর্ভপাতের সরঞ্জামাদি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বা সূলভমূল্যে সরবরাহ করা। গর্ভপাতের নিয়মাবলী শিক্ষা দেয়ার জন্য ফ্রী ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। 

৫. একজন অবিবাহিত যৌনসঙ্গীকে স্বামীর মর্যাদা প্রদান এবং বৈধ সন্তান ও জারজ সন্তানকে আইনের চোখে সমানভাবে দেখা।

৬. পতিতাদেরকে যথাযথ সেফটি প্রদান করা।

একজন সুস্থমস্তিষ্ক ব্যক্তির পক্ষে এ বিষয়টি উপলব্ধি করা কঠিন নয় যে, সিডও সনদ ও নারী কমিশনের ধারাগুলো যে শুধু আমাদের কৃষ্টি-কালচারের পরিপন্থি তা নয়; বরং এর অনেক গুলোই প্রকৃতির আইনের পুরোপুরি উল্টো। সামান্য পর্যালোচনা করলেই এ কথাটি দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জাতিসংঘ ও এর ফ্রীম্যাসন্রী দোসররা গোটা বিশ্বকে একটি বিশাল পতিতালয়ে পরিণত করতে চায়। উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সময় তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে নানারকম রাজনৈতিক চাপ ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সিডও সনদ ও তথাকথিত অন্যান্য নারী-উন্নয়নমূলক রেজোলুশনগুলো বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করা হয়। 

জাতিসংঘের নারীবাদী চেলা-চামুন্ডারা যে এই ঘৃণ্য মিশনে কামিয়াব হচ্ছে, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। বৃটেনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার এক তদন্ত অনুযায়ী, বিশ্বের বিশাল কয়েকটি পতিতালয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল – বাংলাদেশের দৌলতদীয়া। যেখানে ১৬০০ জন পতিতারা প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি পুরুষের সাথে যৌনাচার করে। এ পতিতালয়টি আজ থেকে পঁচিশ বছর পূর্বে শুরু হয় এবং এটা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ১৪ টি বিশাল পতিতালয়গুলোর একটি। নারীবাদীরা চাইল্ড স্লেভারীর নিন্দা জানায়, অথচ দৌলতদীয়ার অধিকাংশ পতিতারা পতিতাবৃত্তি শুরু করে যখন তাদের বয়স ছিল মাত্র চৌদ্দ বৎসর! সাথে সাথে প্রগতিবাদী সরকারী নেতৃবৃন্দরাও এ জঘন্য কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করে! সংসদে আইন পাশ করে আটারো বৎসরের নিচে বিবাহ করাকে অবৈধ করা হয়। বিবাহ সার্টিফিকেটে আটারোর নিচে বয়স লিখলে সে সার্টিফিকেট বাতিল; আর চৌদ্দ বৎসর বয়সে পতিতাবৃত্তি হালাল!

এখন আসুন হেফাজতের ১৩ দফায় একটু চোখ বুলিয়ে নেই। হেফাজতের কোন দাবীটি নারীবাদীদেরকে এতো বেশী ক্ষ্যাপাল? ১৩ দফা দাবীর ৪ নং ধারায় আছে, ‘ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়পনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।’ যারা সিডও সনদ বাস্তবায়ন করে নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশের প্রতিটি মা-বোনকে এক একটি পতিতাতে পরিণত করতে চায়, তারা কেনই বা এ দাবীটির বিরোধীতা করবে না!

নারীবাদীদের প্রতি আমার একটিই আবদার যে, বাংলাদেশের মা-বোনেরা তোমাদের প্রতি কী অপরাধ করেছিল যে, তোমরা তাদেরকে পতিতা বানিয়ে সে অপরাধের প্রতিশোধ নিতে চাও!

Scroll to Top